দেড় হাজার করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের ঋণ সহায়তার আবেদন পড়েছে কক্সবাজারে

ডেইলি কক্সবাজার ◑

কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অভিবাসিদের পূর্নবাসন করতে যাচ্ছে সরকার। যে সকল প্রবাসী ১ মার্চের পর দেশে এসে করোনায় আক্রান্ত এবং মারা গেছেন তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি হিসাবে নামমাত্র (৪ শতাংশ) সুদে ঋণ প্রদান করা হবে। এ জন্য নীতিমালা ও প্রণয়ন করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসিরা ২ লাখ টাকা জামানতবিহীন এবং ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত দিয়ে এ ঋন নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী ডেক্সের চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারি পরিচালক মোঃ জহিরুল আলম মজুমদার।

তিনি জানান ইতোমধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ি আগত অভিবাসিদের তালিকা প্রণয়নের জন্য জেলা অফিসসমুহে আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুৎসুদ্দি জানান, আমরা কক্সবাজারের প্রায় দেড় হাজার প্রবাসীদের আবেদন জমা নিয়েছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আরো জমা নেওয়ার সময় আছে। নতুন সহকারি পরিচালক হিসাবে কক্সবাজারে গতকাল মেহেদী হাসান যোগদান করেছেন। তিনি পেকুয়ায় অফিসের কাজে থাকায় বিস্তারিত জানাতে পারেননি। তবে তিনি জানান, আমরা কোভিড-১৯ এর কারণে ১ মার্চের পরে আসাসহ সকল প্রবাসীদের আবেদন জমা নিচ্ছি। আবেদনে নাম, পিতা, মাতা, স্থায়ী ঠিকানা, যে দেশ থেকে ফেরত এসেছেন তার নাম, তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিপত্রের ফটোকপি, ফিরতি এবং আসা বিমানের টিকেটের ফটোকপি, বিমানবন্দরের সিলযুক্ত পাসপোর্টের ছবি, আবেদনকারির স্বাক্ষরসহ বিনামূল্যে সরবরাহকৃত আবেদনপত্রের বিস্তারিত উল্লেখ করে অফিস চলাকালিন আবেদন গ্রহন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজার আটকে পড়া প্রবাসী জেলা অফিসে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

এদিকে সরেজমিনে জেলা জনশক্তি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে অনেক প্রবাসী কি কারণে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে তা জানেননা। পেকুয়া থেকে আসা সৌদিয়া প্রবাসী জয়নাল আবেদিন জানান, আমি শুনেছি সরকার আমাদের সাহায্য করছে কিন্তু এখানে এসে শুনেছি এটি সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের ঋন দেওয়ার জন্য আবেদন জমা নিচ্ছে। তবে কখন, কিভাবে এ ঋণ দেওয়া হবে স্বয়ং এ অফিসে কর্মরত ২ জন কর্মকর্তাই জানেননা। তারা শুধু ডাটা এন্ট্রি করে রাখছেন বলে মুৎসুদ্দি জানান। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ২০ হাজার প্রবাসী দেশে এসে আটকা পড়েছেন বলে জানান সাবেক সহকারি পরিচালক মোঃ নুরুল আবছার।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বিভিাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কর্মকর্তা মহেন্দ্র চাকমা জানান, প্রবাসী যারা দুঃস্থ, অসহায়, ১ মার্চের পরে দেশে এসে কর্মহীন হয়ে পড়া, করোনা আক্রান্ত, মৃত প্রবাসীর পরিবারের সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ২- ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশ সুদে এ ঋণ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে জেলা জনশক্তি অফিস শুধু তাদের একটি প্রত্যয়নপত্র দেবে। বাকিটা ব্যাংক করবে। এ টাকা ওয়েজ অনার কল্যাণ বোর্ডের টাকা। প্রবাসীরা কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, মুদি দোকান, ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবে। ২ লাখ টাকা ঋণের জন্য কোন জামানত দরকার পড়বেনা তবে ৩-৫ লাখ পর্যন্ত ঋণের জন্য আবেদনকারিকে জামানত দিতে হবে।

এদিকে প্রবাসীদের সরকার সহায়তা হিসাবে এ ব্যাংক ঋণ দেয়া হচ্ছে। অনেকে এটাকে প্রণোদনা হিসাবে দেওয়ার খবরে বিভিন্ন জনশক্তি অফিসে প্রবাসীরা ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সহকারি পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার। তিনি প্রবাসীদের জেলা কার্যালয়ে ভীড় না করার পরামর্শ দেন। শুধুমাত্র কোভিড ১৯ ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসিরা এ ঋণের আওতায় আসবে বলে তিনি জানান।
এদিকে গেল ৫ মাসে কক্সবাজারে প্রায় ২০ হাজারের অধিক প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আটকা পড়েছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। অনেকের আবার পাসপোর্টের মেয়াদও নেই। অনেক প্রবাসিকে নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ভিসা নবায়নও করছেনা। অনেক দেশে এখনো পুরো দমে ফ্লাইট ও চালু করেনি। ফলে প্রায়

২০ হাজার প্রবাসীর দিন কাটছে নানা উৎকন্ঠায়। আগত প্রবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগ সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, কাতার ,কুয়েতের । পরিবারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে তারা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। তাদের জন্য সরকারের এ ঋণ প্রদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস সচেতন মহলের। তবে তাদের জন্য গৃহিত ঋণ নীতিমালা স্বচ্ছ এবং সহজীকরণের দাবি ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসিদের।